ভিডিও এডিটিং করে অনলাইন থেকে আয় 2023

 ভিডিও এডিটিং করে অনলাইন থেকে আয় করার বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। কিন্তু স্বপ্ন মনে হলেও এটা সত্যি যে আপনি চাইলে বাড়িতে বসে ভিডিও এডিটিং করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। পূর্বে আমরা ছবি এডিট করে আয় করার কথা আলোচনা করেছিলাম।

 

Computer Ekush

ভিডিও এডিটিং করে আয় করার জন্য আপনাকে প্রথমত ভিডিও এডিটিং কি? তা বুঝতে হবে। তাছাড়া আরো কিছু আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফোকাস করতে হবে।

ভিডিও এডিটিং করে আয় করার জন্য কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং কিভাবে কি করবেন এসব নিয়েই বিস্তারিত থাকছে এই আর্টিকেলে।

ভিডিও এডিটিং কি? (What is Video Editing?)

ভিডিও সম্পাদনা হলো মিউজিক ভিডিও, ভিডিও ফুটেজ বা সিনেমা তৈরির জন্য ভিডিও ক্লিপ, চিত্র এবং শব্দগুলো একসাথে যুক্ত করার প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে অনুভূতিতে প্রকাশ করতে সক্ষম।

যখন অ্যানালগ প্রযুক্তিতে ভিডিও ধারন করা হতো তখন থেকে Video Editing করা হয়। তখন অবশ্য ফিল্ম রিলগুলো কাটা, যুক্ত করা, ফ্রেম মোছা ও যুক্ত করার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজকাল, এটি সাধারণত অভিনব ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে করা হয়।

ভিডিও এডিটিং কেন জরুরী?

ভিডিও সম্পাদনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চিত্র এবং শব্দের সংমিশ্রনের মূল চাবিকাঠি, যা আমাদের ইমোশনালি কানেক্টে করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একটি মুভি বা নাটকে পরিচালক যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তা দর্শকের কাছে সঠিকভাবে পৌছানোর জন্য ভিডিও এডিটিং তথা ভিডিও এডিটর দায়বদ্ধ।

আমরা যারা বিভিন্ন মুভি, মিউজিক ভিডিও দেখি তখন আমরা বুঝতে পারি যে একটি গল্পকে প্রকাশ করার জন্য ভিডিও এডিটিং কতটা জরুরী।

দৃশ্যটি দুঃখের, তাই সম্পাদক কিছু কষ্টের সংগীত যোগ করে ভিডিওকে বাস্তব করে তুলতে পারেন। পরিচালকের বার্তা সফলভাবে পৌঁছেছে তা নিশ্চিত করাই একজন ভিডিও এডিটরে প্রধান কাজ।

ভিডিও এডিটিংকে কেও কেও নিজের শখ হিসেবে দেখেন, আর কিছু লোক নিজের পার্ট টাইম অথবা ফুল টাইম পেশা হিসেবে নিয়েছেন বা নিতে চান।

আপনিও যদি সেই শখের বসে ভিডিও এডিট করে থাকেন তবে, তা কাজে লাগিয়ে কিছু টাকা ইনকাম করার কথা ভাবতে পারেন।

তবে ভিডিও এডিটিং করে ইনকাম করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইডিটিং জানতে হবে। এটির মাধ্যমে কতটা ইনকাম আপনার হবে এটি নির্ভর করবে।

ভিডিও এডিটিং শেখার উপায়

বর্তমানে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য ইউটিউব সেরা একটি প্ল্যাটফর্ম। ইউটিউবে যেকোনো টিউটোরিয়াল অনেক সহজে আমরা পেয়ে যাই।

ভিডিও এডিট শিখুন ইউটিউব (YouTube) কে কাজে লাগিয়ে। এখানে ভিডিও এডিটিং নিয়ে অসংখ্য ফ্রি টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।

এছাড়াও অসংখ্য অনলাইন কোর্স করার সাইট এ ফ্রি ও পেইড কোর্স রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি কিছু টাকা খরচ করে ভিডিও এডিটিং পুরোপুরি ভাবে শিখে নিতে পারবেন।

তবে, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হওয়ার সবচেয়ে প্রধান উপায় হচ্ছে প্রাকটিস। নিশ্চয়ই শুনেছেন, Practice Make A Man Perfect. কোনো জিনিষ শিখতে এবং দক্ষতা অর্জন করতে হলে প্রাকটিস এর কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত চর্চা করলে আপনি অতি দ্রুতই ভিডিও এডিট করা শিখে ফেলতে পারবেন।

ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার

বর্তমানে ভিডিও এডিট করার অনেক জনপ্রিয় সফটওয়্যার আছে, তবে সবাই সবকিছুতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করবে এমন কোনো কথা নেই। তাই আমরা চেষ্টা করেছি বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করে সেরা কিছু Video Editor  টুলস লিস্ট করার।

ইউটিউবার বা ইউটিউব ভিডিও এডিট করার সেরা সফটওয়্যার কোনগুলো?

Adobe Premiere Pro

Adobe After Effects

Lightworks

Final Cut Pro X

Freemake

iMovie

Shotcut

নতুনদের জন্য সেরা ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার লিস্ট:

Movavi Video Editor Plus

Apple iMovie

Lumen5HitFilm 4 Express

Pinnacle Studio

Blender

Nero Video

ম্যাকবুকের জন্য সেরা ফ্রি ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার :

iMovie

Lightworks

OpenShot

Video Editor

DaVinci Resolve

MovieMator

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার for PC :

HitFilm Express

Shotcut

Lightworks

Movie Maker 10

Openshot

ওয়াটার মার্ক বা ক্রেডিটবিহীন সেরা ফ্রি ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার :

OpenShot

Lightworks

VSDC

Shotcut

DaVinci Resolve

ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার for Android

অনেকের মাথায় নিশ্চই প্রশ্ন আসবে যে আমাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটির সাহায্যে কি আমরা ভালো এডিটিং করতে পারি?

তো এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, বর্তমানে অসংখ্য ভালো এডিটিং অ্যাপ রয়েছে যার সাহায্যে প্রোফেশনাল ভাবে ভিডিও এডিটিং করা সম্ভব।

এমন কয়েকটি অ্যাপ হলো;

Kine Master,

Power Director,

Inshot, ইত্যাদি।

এই অ্যাপগুলো ব্যাবহার করে আপনি ভিডিও এডিটিং শিখতে পারেন এবং করতেও পারেন। আর অ্যাপগুলো একদমই ফ্রিতে ব্যাবহার করতে পারেন।

ফ্রী নাকি পেইড সফটওয়্যার, কোনটি দিয়ে এডিট করবেন?

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানতে পারলাম যে ভিডিও এডিটিং কি এবং কিভাবে ভিডিও এডিটিং করে আয় করতে হবে ইত্যাদি।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো ফ্রীতে যে ভিডিও এডিটিং অ্যাপ গুলো রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে এডিট করা ভালো হবে নাকি পেইড এডিটর দ্বারা ভিডিও এডিট করলে সেটি ভালো হবে।

 

এক্ষেত্রে পেইড ভিডিও এডিটর অ্যাপগুলো একটু এগিয়ে থাকবে। কিন্তু তার মানে এইটা না যে ফ্রীতে যে অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ভিডিও এডিট করা যায়, সেগুলো ভালো নয়।

অবশ্যই সেগুলো ভালো, কিন্তু তফাৎ একটাই, ফ্রী ভিডিও এডিটর অ্যাপগুলোর থেকে প্রিমিয়াম অ্যাপগুলোতে অনেক বেশি এবং আকর্ষনীয় ফিচার পাওয়া যায়, যা প্রফেশনাল Video Edit করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিও এডিট করে আয় করা যায় কিভাবে?

এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানলাম যে ভিডিও এডিটিং কি এবং কিভাবে আমরা এডিটিং শিখে নিতে পারি। তবে চলুন এখন জেনে নেই কিভাবে এডিটিং করার মাধ্যমে আমরা আয় করতে পারি।

কয়েকটি উপায়ে আমরা এডিটিং এর মাধ্যমে আয় করতে পারি। যেমন:

১. সোশ্যাল মিডিয়া ক্লায়েন্ট

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক গুলোতে প্রচুর মানুষ সক্রিয় থাকে প্রতিনিয়ত। অসংখ্য সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে যেমন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইত্যাদি। এদের মধ্যে ফেসবুক অন্যতম।

তাই ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে মূলত আমরা ক্লায়েন্ট খুঁজবো। ক্লায়েন্ট বলতে মূলত বুঝানো হয়েছে আপনি যার ভিডিও এডিট করার মাধ্যমে আয় করবেন তাকে।

ক্লায়েন্ট খোঁজার প্রথমে আপনাকে একটি কার্ড বানিয়ে নিতে হবে। কার্ড মানে হচ্ছে আপনার একটি ছবি থাকবে এবং সেখানে আপনার কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা থাকবে, যেটিকে সহজ ভাষায় কার্ড বলা হয়েছে। এটির মাধ্যমে ক্লায়েন্ট এর কাছে প্রতিদ্বন্দীদের থেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।

এখন আপনি ভিডিও এডিটিং বিষয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন সাথে আপনার কাজ সম্পর্কে পোস্ট করুন।

তাছাড়া নিজের একটি ফেসবুক পেজ বানিয়েও প্রচারণা চালাতে পারেন। যেখানে আপনার কাজের স্যাম্পল পোস্ট করতে পারেন, যা ক্লায়েন্ট এর আস্থা অর্জন করতে ব্যাপক কার্যকরী।

এইভাবে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সহজে ক্লায়েন্ট পেয়ে ,তাদের ভিডিও এডিট করে আয় করতে পারেন।

তবে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, সেটি হলো অবশ্যই প্রথম প্রথম বেশি টাকা চার্জ করবেন না, সেইরকম হলে ক্লায়েন্ট বিরক্ত হয়ে যেতে পারে সাথে আপনিও একটি ক্লায়েন্ট হারাতে পারেন।

প্রথমে স্বল্প মূল্যে কিছু ভালো কাজ করে নিজের প্রোফাইল ভ্যালু বাড়িয়ে নিন, তারপর ডিমান্ড বাড়ার সাথে সাথে চার্জ বেশি করবেন।

২. ফাইভার এর মাধ্যমে

আপনি নিশ্চই এর আগে ফাইভার এর সম্পর্কে জেনে থাকবেন। ফাইভার হচ্ছে একটি সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট। যেখানে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।

এখানে আপনি একজন ভিডিও এডিটর হিসেবে যুক্ত হয়ে আয় করতে পারেন। ফাইবারে কাজ করার জন্য প্রথমত আপনার একটি অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নিতে হবে এরপর আপনাকে ক্লায়েন্ট পেতে হবে।

ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য প্রথমত আপনাকে কম দামে প্রোফাইল সাজিয়ে নিতে হবে। মানে আপনাকে কম টাকার বিনিময়ে কাজ করতে হবে।

কারণ শুরুতে যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যোগ দিবেন তখন কাজ পেতে আপনার একটু হলেও কষ্ট হতে পারে।

এখানে আপনি একটি ভিডিও এডিট করার জন্য সর্বনিম্ন 5 ডলার থেকে 100 ডলার পযর্ন্ত আয় করতে পারেন। কাজ ভালো দিলে এসব ক্লায়েন্ট আপনার জন্য পার্মানেন্ট হয়ে যাবে।

তাই সবসময় নিজের কাজের উপর জোর দিন। এতে আপনার প্রোফাইল রেটিং অনেক ভালো হতে থাকবে, যা পরবর্তীতে চার্জ বেশি করতে সহায়ক হবে।

একবার যদি আপনি এখানে নিজের ভালো একটি প্রোফাইল তৈরি করতে ফেলতে পারেন, তবে এডিটিং এর কাজ আপনি একসময় প্রচুর পরিমাণে অর্থ এখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন।

৩. ইউটিউব এর সাহায্যে

বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে অসংখ্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছে যারা বিভিন্ন ভিডিও এডিটর দের অনুসন্ধান করে থাকে।

আপনি মূলত এমন কয়েকটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের চ্যানেল এর ডেসক্রিপশন চেক করুন, যেখানে আপনি বিজনেস এর জন্য একটি মেইল দেখতে পাবেন।

আপনার কাজ হলো সেটিকে কপি করা এবং প্রফেশনাল ভাবে একটি মেইল করে তাদের জানানো যে আপনি একজন প্রোফেশনাল কনটেন্ট এডিটর।

যদি আপনার মেইল এর সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে সর্বোচ্চ ২-৩দিনের মধ্যে আপনি রিপ্লাই পেয়ে যেতে পারেন। এইভাবে আপনি বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মেইল করার মাধ্যমে কাজ খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন।

এছাড়া, বাংলাদেশী আয় করার ওয়েবসাইট গুলোর মাঝে কিছু ফ্রিল্যান্সিং সাইট রয়েছে, যেখানে তুলনামূলক সহজে কাজ পেতে পারেন, এবং পেমেন্ট সিস্টেমও সুবিধাজনক।

ভিডিও এডিটিং নিয়ে শেষ কথা

তাহলে, আজকের আর্টিকেলটা পড়ে আমরা জানলাম ভিডিও এডিটিং কি এবং কিভাবে ভিডিও এডিট করার মাধ্যমে ইনকাম করবো, ইত্যাদি।

আর্টিকেলটা ভালোভাবে পড়ে থাকলে আপনি অবশ্যই সম্পূর্ণ বিষয়টি এতক্ষনে বুঝে গেছেন। তারপরেও যদি এসম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট বক্স আপনার জন্য ওপেন রইলো।

 

 

Post a Comment

0 Comments