কম্পিউটার
গ্রাফিক্স কি,
কিভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা
তথ্য প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে
কম্পিউটার। আর কম্পিউটারের একটি চমক হচ্ছে — কম্পিউটার গ্রাফিক্স (Computer Graphics)। সাধারণত কাউকে যদি প্রশ্ন
করেন যে কম্পিউটার গ্রাফিক্স কি তাহলে এক এক জনের কাছ থেকে এক এক রকম উত্তর পাবেন
আপনি। কেউ বলবে কম্পিউটারের মনিটরের পর্দায় আমরা যা-ই দেখতে পাই সেটাই হচ্ছে
কম্পিউটার গ্রাফিক্স, কেউ হয়তো বলবে গেমস খেলার সময়
কম্পিউটারে যে থ্রিডি ছবি আমাদেরকে উপহার দেয় সেটাই হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স,
আবার কেউ হয়তো আপনাকে উল্টো প্রশ্ন করতে পারে যে ভাই আপনিই বলে দেন।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স সত্যিকারের কোন গ্রাফিক্স
নয়, বরং 1 বা 0 এর সমন্বয়, বা ডিজিটাল তথ্য!
জ্বী আজ ওয়্যারবিডিে বিস্তারিত আলোচনা করতে
এসেছি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের খুঁটিনাটি নিয়ে। বিষয়টিকে সহজ করে বলি, আগেরকার সময়ে যখন কম্পিউটার ছিলো না তখন কোনো চিত্রশিল্পী তার
চিত্রকর্মগুলো একটি কাগজে বা ক্যানভাসে রং এবং বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে আঁকতেন।
ঠিক তেমনি আগেরকার দিনের ফ্যাশন ডিজাইনার, আর্কিটেকচার বা
যেকোনো বিষয়ের বিজ্ঞানীরা এই কাগজ, রং তুলির সাহায্যে তাদের
প্রোজেক্টগুলোকে উপস্থাপন করতেন। আর বর্তমান আধুনিক যুগে এসে এই ক্যানভাসের
পরিবর্তনে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার বা আল্টিমেইটলি কম্পিউটার গ্রাফিক্স।
হ্যাঁ বর্তমান যুগের আর্কিটেকচারার, ওয়েব ডিজাইনার, ফ্যাশন স্টুডেন্ট কিংবা
বিজ্ঞানীদেরকে কম্পিউটার গ্রাফিক্স তাদের প্রোজেক্টগুলো বাস্তবায়নে সাহায্য করে
আসছে। এখনো মাথায় বিষয়টি ঢোকে নি? তাহলে চলুন একদম শুরু
থেকেই সবকিছু শুরু করছি!
কম্পিউটার গ্রাফিক্স কি?
কম্পিউটার গ্রাফিক্স হচ্ছে কম্পিউটার স্ক্রিণে
কোনো কিছু আঁকাকে বুঝায়। এটা হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের আভিধানিক অর্থ। আপনি যদি
কোনো পেপারে কোন কিছু আঁকেন (যেমন কোনো মানুষের ছবি বা ঘরের ছবি) তাহলে সেটা হবে
একটি এ্যানালগ
ইনফরমেশন। আর
একই জিনিস যদি আপনি কম্পিউটার স্ক্রিণে নিয়ে আসেন তখনই সেটা হয়ে যাবে একটি ডিজিটাল
ইনফরমেশন — আর সেটাই হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স।
Vector illustration Credit:
By Andrush Via Shutterstock
এ্যানালগ ইনফরমেশন বা কাগজে কলমে কোনো কিছু
আঁকলে পরবর্তীতে সেটা পরিবর্তন করা বেশ ঝামেলার কাজ। যেমন আপনি যদি আপনার হাই
সিক্রেট সাইন্স প্রজেক্টের কার্যাবলির খসড়া যদি কোনো পেপারে আঁকতে যান তাহলে হয়তো
পেন্সিল দিয়ে আপনি আঁকতে পারেন, পরবর্তীতে ভূল হলে রাবার দিয়ে
সেটা মুছে দিলেন। কিন্তু যারা পেন্সিল ব্যবহার করেন না বা যেসকল জায়গায় পেন্সিলের
আঁকা ছবি গ্রহণযোগ্য হয় না সেক্ষেত্রে একটু ছোটখাট ভূল হলেই পুনরায় নতুন করে আঁকতে
হয়। আবার আপনি যদি তৈলচিত্র ব্যবহার করে কোনো প্রজেক্ট আঁকলেন কিন্তু শেষে গিয়ে
যদি প্রয়োজনে কোনো রং কে পরিবর্তন করতে হয় তখন কি করবেন? আবারো
সেই প্রথম থেকেই শুরু করতে হয়।
কিন্তু কম্পিউটার গ্রাফিক্সে এই সকল ঝামেলা
নেই। সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে জানলে কম্পিউটার গ্রাফিক্সে আঁকা যেকোনো কিছুর
প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ পরবর্তীতে পরিবর্তন করা যায়।
তাই বর্তমানে ইতিমধ্যেই আর্স্টিট, ডিজাইনার
এবং আর্কিটেকচাররা তাদের প্রজেক্টগুলোকে কম্পিউটারের সাহায্যে সুবিধাজনক উপায়ে
তৈরি করে নিতে পারছেন।
তাছাড়া অ্যানালগ
এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত
জানতে, এই
আর্টিকেলটি চেক করতে পারেন!
কম্পিউটার গ্রাফিক্সের
প্রকারভেদ
সকল কম্পিউটার আর্ট হচ্ছে ডিজিটাল। তবে একটি
কম্পিউটার স্ক্রিণে ডিজিটাল ইমেজ আঁকার দুটি পদ্ধতি বা উপায় রয়েছে। একটি হচ্ছে — রাস্টার গ্রাফিক্স (Raster Graphics) এবং
অপরটি হচ্ছে ভেক্টর গ্রাফিক্স (Vector
Graphics)। সাধারণ
কম্পিউটার গ্রাফিক্স প্রোগ্রামগুলো যেমন মাইক্রোসফট
পেইন্ট (Microsoft Paint) এবং পেইন্টশপ প্রো (PaintShop Pro) হচ্ছে
রাস্টার গ্রাফিক্সের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে এবং এই প্রোগ্রামগুলো এই
রাস্টার গ্রাফিক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে আরো উচ্চমানে কম্পিউটার
গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম যেমনঃ কোরেল ড্র (CorelDRAW), অটো ক্যাড (AutoCAD), এবং অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর (Adobe Illustrator) — এরা ভেক্টর গ্রাফিক্স ব্যবহার করে থাকে।
চলুন, এবার
রাস্টার গ্রাফিক্স এবং ভেক্টর গ্রাফিক্সের মধ্যের বেসিক বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক!
রাস্টার গ্রাফিক্স
আপনার কম্পিউটার স্ক্রিণের একদম কাছে এসে একটু
নিবিড় ভাবে লক্ষ্য করুন। নিবিড় ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কম্পিউটার পর্দায় ছবি
আর ওর্য়াডগুলোকে দেখবেন অনেকগুলো ছোট এবং ক্ষুদ্রকৃতির কালার ডট বা স্কোয়ার দিয়ে
সাজানো হয়েছে। এগুলো পিক্সেল (pixels)
বলে। অধিকাংশ সিম্পল কম্পিউটার গ্রাফিক্স ইমেজগুলো এই পিক্সেলের
সাহায্যেই তৈরি করা হয়ে থাকে, যেমনটি অনেকগুলো ইট মিলে একটি
দেয়ার তৈরি করা হয়।
একদম শুরুর দিকের কম্পিউটার স্ক্রিণগুলো ২০
শতাব্দির মাঝামাঝিতে নিমার্ণ করা হয়েছিলো। এগুলো তখন টেলিভিশনের মতোই কাজ করতো।
ইলেক্ট্রন বিমগুলোকে ক্রমাগতভাবে স্ক্যানিং করে উপর-নিচ-ডানে-বামে করে একটি
ইলেক্ট্রনিক পেইন্টব্রাশের মতো করে তখনকার মনিটারগুলোতে মুভিং পিকচার আনা হয়েছিলো।
এই পদ্ধতিতে কোনো ছবি বানানো হলে তাকে বলা রাস্টার
স্ক্যানিং (Raster Scanning) এবং এর জন্যই
পিক্সেলের সাহায্যে কম্পিউটার স্ক্রিণে কোনো ছবি বানানো হলে তাকে বলা হয় —
রাস্টার গ্রাফিক্স।
বিটম্যাপস
কম্পিউটারের বাইনারি (Binary)
শব্দটির কথা আপনি নিশ্চয় আগে শুনেছেন। বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমেই
কম্পিউটার তার যাবতীয় কাজ নির্বাহ করে থাকে। যেমন ডেসিমাল নাম্বারগুলোকে (১,২,৩,৪……..ইত্যাদি) কম্পিউটার সহজ ভাবে নিজের ভাষায় মাত্র দুটি অক্ষরে ট্রান্সফর্ম
করে নিয়ে তারপর কাজ করে। এই দুটি অক্ষর হচ্ছে শূন্য (০) এবং এক (১)। তাই আপনার
কাছে ৫৬৭৮ নাম্বারটি কম্পিউটার বাইনারি ভাষায় ১০১১০০০১০১১১০ হবে। ধরুণ আপনি একটি
কম্পিউটার, এবং আপনার পর্দা কেউ সাদা কালো রংয়ের একটি ছবি
আঁকলো। এবার আপনি আপনার বাইনারি সংখ্যাগুলোকে এখানে প্রয়োগ করে এই ড্রয়িংয়ের
উপাদানগুলোকে মনে রাখবেন। যেমন জিরো অক্ষরটি ব্যবহার করে ছবিটির সাদা অংশটুকুকে
মনে রাখলেন এবং ওয়ান অক্ষরটি ব্যবহার করে ছবিটির কালো অংশটুকুকে মনে রাখলেন।
Binary Digits থেকে Bit শব্দটি এসেছে এবং Bits থেকে Bitmaps এসেছে!
এভাবেই একটি পূর্ণাঙ্গ আকৃতির ছবিকে কম্পিউটার
এই বাইনারি ভাষায় মনে রাখে। কম্পিউটারের কাছে ছবি কিন্তু কোনো ছবি না, তার কাছে এটা শুধুমাত্র একটি বাইনারি সংখ্যার সমাবেশ মাত্র। যেমন ৮০০ x
৬০০ রেজুলেশনের একটি ছবি কম্পিউটারের কাছে ৮০০ পিক্সেলের এবং ৬০০
পিক্সেলের সমন্নয়ে ৪৮০,০০০ জিরো এবং ওয়ানের সমষ্টি হবে।
এইভাবে একটি ছবিকে কম্পিউটার তার বাইনারি ডিজিট মনে রাখার সিস্টেমকে বিটম্যাপস (Bitmaps) বলে।
অধিক রংয়ের ছবি কম্পিউটারে স্টোর করার জন্য চাই
অধিক পিক্সেলের মানে অধিক বিটস মেমোরি। আর এজন্যই একটি একই সাইজের সাদাকালো ছবির
থেকে একটি রঙ্গিন ছবির সাইজ ভিন্ন হয়ে থাকে!
রাস্টার গ্রাফিক্স হচ্ছে খুব সহজে ব্যবহারযোগ্য
একটি গ্রাফিক্স। আর তাই অধিকাংশ প্রোগ্রামই এই গ্রাফিক্স সিস্টেম ব্যবহার করে
থাকে। ধরুণ আপনি আপনার কম্পিউটার স্ক্রিণে একটি পিক্সেল ছবি আকঁলেন এবং মাউস বাটনে
ক্লিক করে ছবিকে mirror বা ফ্লিপ করে দিলেন আর
সাথে সাথে ছবিটি ফ্লিপ হয়ে গেল। এইটি কম্পিউটার করছে তার পিক্সেলের সাজানোর
অর্ডারকে উল্টো করে দিয়ে, অর্থাৎ জিরো এবং ওয়ানকে তাদের
ক্রমান্নয় থেকে পাল্টে দিয়ে। আবার আপনি যদি কোনো ছবিকে দ্বিগুণ আকারে বড় করে নেন
তাহলে কম্পিউটারও আপনার সাথে পিক্সেলগুলোর দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি করে দেয়। মানে
১০১১০ পিক্সেলের ছবি দ্বিগুণ করতে কম্পিউটার এটাকে ১১০০১১১১০০ করে নেবে। কিন্তু
একই সাথে ইমেজটির কোয়ালিটি কিন্তু দ্বিগুণ হারে বাড়বে না। আর এটাই রাস্টার
গ্রাফিক্সের একটি দুর্বলতা। আর তাই আপনি আপনার মোবাইলের ক্যামেরার ছবিকে যত বড়
করতে থাকবেন ছবিটি তত ঘোলা আর অপরিস্কার হতে থাকবে। আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে এই
রাস্টার গ্রাফিক্সে কম মেমোরি থাকে।
একটি ডিটেইল ছবিতে ১৬ মিলিয়ন কালারস থাকতে পারে, যেটায় প্রতি পিক্সেলে ২৪ বিটস এবং একটি বেসিক সাদা-কালো ইমেজের থেকে ২৪
গুণ বেশি মেমোরির প্রয়োজন হবে। নিজেই ক্যালকুলেশন করে দেখুন যে একটি 1024 x
768 মনিটরের সম্পূর্ণটা একটি ইমেজ দিয়ে পরিপূর্ণ করতে চাইলে সেটায়
যদি প্রতি পিক্সেলে ২৪ বিটস এর দরকার হয় তাহলে সেই ইমেজের টোটাল সাইজ গিয়ে দাড়াবে
২.৫ মেগাবাইট।
রেজুলেশন
এবার আসি রেজুলেশন এর ব্যাপারে। রেজুলেশন কি? —
আপনারা কম্পিউটার পর্দায় ভালো মানের ছবির জন্য উন্নত রেজুলেশন
ব্যবহার করে থাকেন। আবার আমরা যারা গেমার রয়েছি তারা নতুন রিলিজকৃত গেমসগুলো
আমাদের পুরোনো কম্পিউটারে ভালো মতো খেলার জন্য যথাসম্ভব কম রেজুলেশন দিয়ে খেলে
থাকি, গেমের রেজুলেশন যত হাই দিতে থাকবেন গেমের ওভারঅল
কোয়ালিটি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং একই সাথে তা আপনার কম্পিউটারকে স্লো করে দিতে
থাকবে। তো আসলে রেজুলেশন কি?
একটি ইমেজে বা একটি কম্পিউটার স্ক্রিণের
পিক্সেলের সর্বোচ্চ নাম্বারকেই রেজুলেশন (Resolution)
বলে। যেমন অতীতের কমোডর পিইটি (Commodore
PET) কম্পিউটারের রেজুলেশন ছিলো আল্ট্রা-লো কোয়ালিটির। সেখানে ২৫টি
লাইনে ৮০টি ক্যারেক্টার প্রদর্শন করতে পারতো, এর মাধ্যমে
পর্দায় সবোর্চ্চ ২০০০ লেটার, নাম্বার বা পাঙ্কচুয়েশন মার্ক
প্রদর্শন করতে পারতো। আর প্রতিটি ক্যারেক্টার ৮ x ৮ স্কোয়ার
পিক্সেলের উপর নির্মিত হওয়ায় কমোডর পিইটি কম্পিউটারটির স্ক্রিণের রেজুলেশন ছিলো 640
x 200 বা 128,000 পিক্সেলস।
যে ল্যাপটপে বসে বসে আমি এই পোষ্টটি টাইপ করছি
সেটার রেজুলেশন হচ্ছে 1280 x 800 বা 1.024 মেগাপিক্সেল, যা আগের কমোডর পিইটি কম্পিউটার থেকে
৭/৮ গুণ বেশি ডিটেইলস বহন করছে। উল্লেখ্য যে ওয়ান মিলিয়ন পিক্সেল মিলে এক
মেগাপিক্সেল হয়। আবার অন্যদিকে ৭ মেগাপিক্সেলের একটি ডিজিটাল ক্যামেরার ছবিগুলো
আমার এই ল্যাপটপের থেকে ৭ গুণ বেশি ডিটেইলযুক্ত হবে।
অ্যান্টি-এলিয়াসিং
একটি কম্পিউটারের পর্দায় পিক্সেলের সাহায্যে
কোনো কিছু দেখানোর সময় সেই অবজেক্টের সাইডের দিকের কার্ভগুলোতে Jagged
Edges বা খাঁজকাটা ভাব আসে। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্য অবজেক্টের
সাইডের দিকের কার্ভের পিক্সেলগুলোকে ঝাঁপসা (Blur) করে দেওয়া
হয়, যাতে কার্ভগুলোতে স্মুথ লাইন ভাব আসে। এই টেকনিককে অ্যান্টি-এলিয়াসিং (Anti-aliasing) বলা হয়।
এর মাধ্যমে কম্পিউটার স্ক্রিণের পিক্সেলগুলোর
স্মুথনেস নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ভিডিও গেমসে এই Anti-aliasing অপশনটি আপনার লক্ষ্য করলেই পেয়ে যাবেন। এই অপশনটি যত বৃদ্ধি করতে থাকবেন
গেমের গ্রাফিক্সের “স্মুথনেস” বা মসৃণ
পরিপাটি ভাব ততই বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং অন্যদিকে এই সাথে এটা আপনার কম্পিউটারের
উপর চাপ বৃদ্ধি করতে থাকবে।
ভেক্টর
গ্রাফিক্স
রাস্টার গ্রাফিক্সের সমস্যাগুলোর সমাধানের
জন্য কম্পিউটার গ্রাফিক্সের আলাদা একটি মেথড রয়েছে। পিক্সেলের সাহায্যে পিকচার
তৈরির থেকে এই পদ্ধতিতে সরাসরি সোজা এবং বাঁকা লাইনের মাধ্যমে ছবি আঁকা হয়। এই
লাইনকে বলা হয় ভেক্টরস বা বেসিক শেইপ। রাস্টার গ্রাফিক্সে কোনো ছবি তৈরি করার সময় যেখানে শতশত,
হাজার হাজার, লক্ষাধিক পিক্সেল ব্যবহৃত হয়। আর
ওই পিক্সেলগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোনো যোগসূত্র থাকে না।
কিন্তু ভেক্টর গ্রাফিক্সে আঁকা ছবিতে
পিক্সেলগুলো একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকে। আর ডটের পরিবর্তে সোজা এবং বাঁকা
লাইনের মাধ্যমে ছবিগুলো তৈরি করা হয় বিধায় ভেক্টর গ্রাফিক্সে তৈরি করা ইমেজগুলো কম
তথ্য দিয়ে দ্রুত স্টোর করা যায়। আর এই ভেক্টর গ্রাফিক্সের তৈরি করা ইমেজ বা
অবজেক্টগুলোকে ম্যাথমেটিক্যাল ফর্মূলার সাহায্যে (Algorithms) খুব
সহজেই বড়-ছোট বা যেকোনো সাইজে পরিবর্তন করা যায়। যেমন মাইক্রোসফট ওর্য়াডে আপনি যখন
কোনো ফ্রন্ট এর সাইজ বড় করেন এবং করতে থাকেন তখন দেখবেন যে যতই বড় করেন না কেন
ফ্রন্টটি ঘোলা হয়ে যাবে না, আবার ভেক্টর গ্রাফিক্সের তৈরি
করা কোনো ইমেজ ফাইলটি আপনি এডোব ইলাস্ট্রেটরে যত ইচ্ছে তত বড় করে নিতে পারবেন কোনো
প্রকার ঘোলাটে ভাব ছাড়াই। এজন্যই ফটোশপে কোনো ছবিকে আপনি জুম-ইন (Zoom In) বা বড় করলে দেখবেন যে ছবিটি ঘোলা যায় কিন্তু ইলাস্ট্রেটরে এগুলো করলে ঘোলা
হয় না।
আবার বর্তমানে মর্ডান কম্পিউটার গ্রাফিক্স
প্যাকেজের সাহায্যে আপনি একই সাথে রাস্টার ও ভেক্টর গ্রাফিক্সের সংমিশ্রণে ছবি বা
অবজেক্ট ব্যবহার করতে পারবেন। যেমনঃ গিম্প (GIMP)
(GNU Image Manipulation Program) গ্রাফিক্স প্যাকেজে আপনি রাস্টার
ও ভেক্টর গ্রাফিক্স একত্রে ব্যবহার করে ছবিকে বিটম্যাপ ফাইলে টান্সফর্ম করতে
পারবেন।
থ্রিডি গ্রাফিক্স
বাস্তব জীবন কিন্তু কম্পিউটার গেম বা ভার্চুয়াল
রিয়েলিটি সিমুলেশন এর মতো নয়। কম্পিউটার গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরি করা বর্তমান যুগের
সবথেকে বেস্ট CGI (Computer-Generated Imagery) এনিমেশনগুলো
দেখলোও আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোনটা এনিমেশন আর কোনটা অভিনেতাদের দিয়ে করানো
হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বর্তমানের ছবি নির্মাতারা বেশ বুদ্ধিমান একটি পদক্ষেপ
নিয়েছেন। আর তা হলো — সিজিআই (CGI) এবং মানুষ এই দুটির একত্রে ব্যবহার করা।
আর থ্রিডি গ্রাফিক্সকে রিয়েলিস্টিক বা বাস্তবিক
করার জন্য একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনের একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও বেশ কঠিন গ্রাফিক্স
টেকনিক প্রয়োগ করতে হয়। আর এজন্যই উন্নত বিশ্বে দক্ষ গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাসিক আয়
বেশ উচ্চমানের! তারা কম্পিউটারে প্রথমে একটি অবজেক্টের থ্রিডি কম্পিউটার মডেল তৈরি
করেন এবং পরবর্তীতে অবজেক্টটির থ্রিডি মডেলকে বিভিন্ন এঙ্গেলে পর্যবেক্ষণ করে
থঅকেন।
থ্রিডি কম্পিউটার মডেল তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে
মডেলটির Three-Dimensional
Outline তৈরি করা, একে বলা হয় Wire-Frame। কারণ ভেক্টর গ্রাফিক্সের
সাহায্যে এগুলো তৈরি করা হয় বিধায় এগুলোকে অনেকটা লোহার তারের মতো দেখতে মনে হয়।
এরপর অবজেক্টটির বিভিন্ন বিটসগুলোকে সঠিক ভাবে একে অপরের সাথে লিংক করা হয় যা
অনেকটা মানব দেহের কংকালে হাড্ডি লাগানোর মতো। এর মাধ্যমে অবজেক্টটির অংশগুলো
বাস্তবিক ভাবে নড়াচড়া করতে পারে। এরপর অবজেক্টটির উপর বিভিন্ন টেক্সচার বসিয়ে একে
রেন্ডার (Render) করা হয়। থ্রিডি গ্রাফিক্সের সবথেকে
কঠিন কাজ হচ্ছে এই রেন্ডারিং। সঠিক ভাবে রেন্ডারিং করতে কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে
কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
থ্রিডি গ্রাফিক্স নিয়ে অনেক কথা বলা যায়, এবং এই টপিক নিয়ে আলাদা একটি বিস্তারিত পোস্ট সামনের কোনো এক দিনে আমি
করবো।
কি কি কাজে কম্পিউটার
গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হয়?
বর্তমানে অনেকগুলো সেক্টরেই কম্পিউটার
গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন, কম্পিউটার
আর্ট, CGI ফ্লিমস, আর্কিটেকচারাল
ড্রয়িংস, ভিডিও গেমস এগুলো হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের
প্রধান ক্ষেত্রস্থল। এছাড়াও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজগুলোকে সহজ করার জন্যেও
কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হয়, কারণ মানুষের ক্যালকুলেশনের
থেকে কম্পিউটার ক্যালকুলেশন ১০০% নির্ভূল হয়। আর কম্পিউটার গ্রাফিক্সে একটি
বৈজ্ঞানিক গবেষনার বিভিন্ন সেক্টরের ফলাফলকে যাচাই করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। ধরুণ একটি ইদূঁরের উপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষনা
চালানো হবে। এক্ষেত্রে ইঁদুরটি গবেষনার কারণে মারা যেতে পারে কিন্তু একটি ইঁদুরের
সকল ডাটাগুলোকে যদি আপনি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে ভাচূর্য়াল ইঁদুর তৈরি করে
নিতে পারেন তাহলে আপনি কম্পিউটারেই আপনার বৈজ্ঞানিক গবেষনা প্রয়োগ করতে পারবেন।
তবে এটা এখনো বাস্তবে করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।
অন্যদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নির্ধারণের
ক্ষেত্রেও কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ভূমিকা রয়েছে, আবহাওয়া
বার্তায় কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যবহার হয়। আর মর্ডান যুগে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের
সবথেকে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে মেডিক্যাল ক্ষেত্রে। আপনি যখন আপনার শরীরের কোনো অংশের এক্সরে বা স্ক্যান
কপিকে দেখেন তখন সেটা একটি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্যে তৈরি করা হয়ে থাকে।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স আবিস্কার করা না হলে এই এক্সরে সিস্টেমটি আমরা আজ পেতাম না।
আর আপনি জানেন কি, একটি এক্সরে ছবিতে কোটি কোটি পিক্সেলের
কোটি কোটি কম্পিউটার ম্যাথমেটিক্যাল রয়েছে?
বর্তমানের মর্ডান কম্পিউটারের সকল প্রোগ্রামে
রয়েছে — জিইউআই (GUI) বা গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (Graphical User Interface)। এর মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার
মেশিনকে এবং প্রোগ্রামগুলোকে খুব সহজে ব্যবহার করতে পারছি। উইন্ডোজ ৯৫ ছিলো
মাইক্রোসফটের প্রথম GUI ভিক্তিক অপারেটিং সিস্টেম,
এর আগের অপারেটিং সিস্টেম MS-DOS য়ে কিন্তু এই
GUI ফিচারটি ছিলো না বিধায় সাধারণ মানুষের জন্য এই অপারেটিং
সিস্টেমটি ব্যবহার করা অনেক কঠিন একটি বিষয় ছিলো।
আশা করবো কম্পিউটার গ্রাফিক্স নিয়ে আপনাদের কে
বেসিক ধারণা দিতে পেরেছি। পোস্টটির কোন অংশ পড়ে যদি না বুঝতে পারেন তাহলে সংঙ্কোচ
না করে নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার প্রশ্নটি করে ফেলতে পারেন। কম্পিউটার গ্রাফিক্স একটি
অনেক বড় সেক্টর। একটি ২০০০ শব্দের পোষ্টে যা আটানো কখনোই সম্ভব নয়। তবু আমি আশা
করবো কম্পিউটার গ্রাফিক্স সম্পর্কে আপনাদের বেসিক ধারণা দিতে পেরেছি।
আর হ্যাঁ কম্পিউটার গ্রাফিক্স কবে আবিস্কার হয়
জানেন কি? সেই ১৯৫১ সালে Massachusetts Institute of Technology (MIT) প্রাইভেট রির্চাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Jay Forrester এবং Robert Everett দুজন মিলে Whirlwind নামের একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটার তৈরি করেন। কম্পিউটারটি টেলিভিশন মনিটরে
বা VDU (visual display unit) তে অপরিমার্জিত ছবি প্রদর্শন
করতে পারতো। এইটাই হচ্ছে ইতিহাসে প্রথম কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যবহার।
0 Comments